মতামত ডেস্ক : প্রাচীনতম ও সংগ্রাম ঐতিহ্যবাহি সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৪৭ সাল থেকে একটানা নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন এই দলটি। দেশ মাতৃকার জন্য যত আন্দোলন সংগ্রাম ছিলো তার নেপথ্যে আওয়ামী লীগ সংগঠনটি।
সেই বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ আজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়ন অবকাঠামোতে তার অবদান আজ সর্বত্র প্রশংসনীয়। একটানা নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে আলোকিত। প্রশংসা করছেন পরাশক্তিরাও।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার হত্যার পর দলটি নিভৃতে থাকলেও শেখ হাসিনা স্বদেশের মাটিতে আসার পর আবারো ঘুরে দাড়িঁয়েছে মাথা উঁচু করে আওয়ামী লীগ। নানা ধরনের ঝড় তুফান আর স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনের দিকে গেছেন শেখ হাসিনা। এ যেন আরেক সাহসী অগ্নিকন্যা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের কাছে যেমন মাথা নত করেনি, ঠিক তেমনি বঙ্গকন্যাও অফুরান সাহসের সাথে দৃঢ় প্রত্যয় এগিয়েছিলেন।
তবে, এর নেপথ্যে ছিলো হাজাল হাজার নিবেদিত কর্মী। যারা শুধু শেখ হাসিনার পাগল ছিলেন তারাই একমাত্র সুখ দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন। একজন শেখ হাসিনার জন্য শতবার কারাভোগও করেছেন এমনও নেতা দলটিতে ছিলো। আবার কেউ ১/১১ এর সময় বিশ্বাস ঘাতকতাও করেছেন। কিন্তু রাজপথের নেতা-কর্মীরা একচুলও পিচপা হয়নি।
জয়বাংলা স্লোগানে মূখরিত সেই ৯০ দশকের নেতাদের মান অভিমান থাকলেও দলের সঙে বেইমানি করেনি। তারা কখনো চাওয়া পাওয়ার অংকে না গিয়ে একজন শেখ হাসিনাকে অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে পাশে ছিলেন। তাদের সেই অক্লান্ত পরিশ্রম আর দলের প্রতি ভালোবাসায় আজ একটানা ক্ষমতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটি দীর্ঘদিন নেতৃত্বে থাকায় মৌসুমি পাখি,কাউয়া, হাইব্রিডদেরও জয়গান চোখে পড়ার মতো।
অতিথি পাখিরা ত্যাগীদের সরিয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরী করতে নানা ধরনের কৌশলও অবলম্বন করছেন। তবে এর ফলটা বেশি মিষ্টি নাও হতেও পারে। দলের ভয়নাক সময় ১৯৯১, ১৯৯৫, ২০০১, ২০০৬,০৭,০৮,০৯ সাল স্বরণীয় হয়ে আছে নেতাকর্মীদের কাছে। এছাড়াও ২০১৪ সালেও ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। এসব মোকাবিলায় ছাত্রজীবন থেকে দলের সঙে পুরো জীবনটাই মিশে ছিলো মাহমুদুল রাসেলদের।
স্কুল জীবনে পা রাখতেই জয়বাংলা স্লোগানে জীবনকে আবদ্ধ করেছে। নিজের জীবনের চিন্তা না করে দলের ডাকে সারা দিয়ে রাজপথে সদা জাগ্রত ছিলেন। আজ হয়তো দলের মধ্যে অতিথিদের পদচারণায় কখনো কখনো মিশে পৃষ্ঠ হয়ে যায়। আবার হাইব্রিড নেতা এদের এখন ছায়ায়ও দেখতে পারে না। দুঃসময়েও ষড়যন্ত্র আর সুসময়েও নিজ দলে ঘাপটি মেরে থাকা হাইব্রিডদের নীলনকশায় পড়তে হচ্ছে এসব কর্মীদের।
ছাত্রলীগের সেই রাজপথ কাপাঁনো নেতাদের দলে খুব কমই দেখা যায়, কারণ তারা অভিমান করছে। যেখানে ত্যাগীদের মুল্যয়ন হয় না সেখানে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা বড় দায় হয়ে পড়ছে বলেই তারা আজ নিরবে নিভৃতে। তবে এসব নেতাদের দলে জায়গা দেওয়া এবং ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ দলটির জন্য। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডাক দিলেই তারা আসবে জয়বাংলার স্লোগানে এবং পাহাড়া দিবে রাজপথ। তবে আত্বীয়লীগ যতক্ষণে হটাতে না পারবে ততক্ষণে আগের পরিবেশ ফেরানো কষ্টকর হয়ে পড়বে দলটির জন্য।
একটি সংসারের মা-বাবা হারালে যখন সন্তানের ওপর সাংসারিক চাপ পড়ে তখন বুঝা যায় সংসার জীবনে মা-বাবা কতই-না কষ্ট করেছে। তেমনি একটি দলও এমন। যখন ত্যাগী নেতাদের হারিয়ে ফেলবে তখন শত চেষ্টা করলেও সে শোক আর কেটে উঠতে কয়েক যুগ চলে যাবে। তাই সময় থাকথেই সাধন প্রয়োজন।
বলেছিলাম ৯০ এর পরের কথা। মাহমুদুল আসাদ রাসেল স্কুল জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই জীবন যৌবন মিশে আছে। স্কুল রাজনীতি থেকেই জীবনে পা রাখেন আওয়ামী লীগে। পরিবার যেহেতু আওয়ামী লীগের তবেই মুখে জয়বাংলার স্লোগান থাকবে। এই রাসেল দলের জন্য কিনা করেছে? বিএনপি জামায়াতের জেল-জুলুম, নির্যাতন-অত্যাচার এসব ছিলো নিত্যদিনের সঙী। ১৯৯৮ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতি যুক্ত হয়েও ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় পর্যন্ত নেতৃত্ব আর রাজপথে ছিলেন। বর্তমানে তিনি রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন, তবে এসব নেতাকর্মীদের মূল্যয়ন করা হয়েছে এজন ধন্যবাদ দলের জেনারেল সেক্রেটারিকে ওবায়দুল কাদের ভাইকে। ওবায়দুল কাদের ভাই তিনিও একজন ত্যাগী নির্যাতিত নেতা ছিলেন, রাজপথ থেকে গড়ে ওঠা।
রাসেলদের মতো এমন হাজারো নেতাকর্মীরা দলের জন্য জীবনকে বাজি রেখে মাঠেঘাটে ছিলেন আজও আছেন। এরা বিনিময়ে কর্মী নয়, শেখ হাসিনার কর্মী পরিচয়ে অনেক তৃপ্তি পায়।
হঠাৎ করে ইদানিং চোখে পড়লো রাসেলদের নিয়ে হাইব্রিডদের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। যখনি দলের দুঃসময় আসে তখনি দলের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এবং নানা সুযোগ সুবিধা ভোগকারী কাউয়ারা এসব নেতাকর্মী ও ত্যাগীদের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। কারণ এরা দলের মধু খেতে এসেছে, ত্যাগীরা তো আর দলের বদনাম চায় না বলেই বিশ্বস্তকর্মী হয়ে পাহাড়া দিচ্ছে। এসব বিষয়ে দলের হাইকমান্ডদের সতর্ক হওয়ার সময় এখন এসেছে।
জামায়াত বিএনপির আতংকের আরেক নাম মাহমুুদুল আসাদ রাসেল’রা। তবে অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়, সময়ের স্রোতে সবকিছু বদলে যায়। ত্যাগীরা হয়তো একদিন মুল্যয়িত হবে সেদিন কবে? অপেক্ষার প্রহর কতবছর? শুভ কামনা দলের দুঃসময়ের সুপরিচিত ত্যাগী ও নির্যাতিত কর্মী মাহমুদুল আসাদ রাসেল। ষড়যন্ত্র বেশিদিন টিকে না, মাত্র অল্প সময়ের জন্য। রাজনীতিতে শেষ বলতে শব্দ নেই।
(লেখক: সাংবাদিক আল-আমিন এম তাওহীদ)
Leave a Reply