সাগরিকা আক্তার মৌসুমি : ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে একাত্তরে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যায় জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচারের দাবিতে আজ ১৪ ডিসেম্বর বুধবার বিকাল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ শেষে জাতিসংঘের মহাসচিব ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

আজ বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতিসংঘের বাংলাদেশস্থ মিশন ও পাকিস্তান দূতাবাসের পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন গুলশান ডিপ্লোমেটিক জোনের বরকত উল্লা।

সংগঠনের পক্ষে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি শাহীন মাতুব্বর। সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা ৬টায় একই জায়গায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় উক্ত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরোও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন সন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালালসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে ও মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচীর বক্তব্যে সংগঠনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন মজুমদার বলেন, “পাকিস্তানকে অবিলম্বে গণহত্যার দায় স্বীকার করে জড়িত পাকিস্তান সেনাদের বিচার করতে হবে। জাতিসংঘের নিকট বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আহবান, একাত্তরের গণহত্যা ও গণধর্ষণে জড়িত পাকিস্তান সেনাদেরকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচার করে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তান ও চীন দূতাবাস এখনো ষড়যন্ত্র চলমান রেখেছে। একাত্তরে চীন পাকিস্তানকে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে আমাদের ওপরে নৃশংস গণহত্যা চালিয়েছিল। ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ১৫ আগস্টে জন্মদিনের উপহার পাঠিয়ে চীন দূতাবাস জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে আবার চরমভাবে অবমাননা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী অপশক্তি পাকিস্তান ও চীন দূতাবাসের কার্যক্রমে নজরদারি বাড়ানোর জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা জহির উদ্দিন জালাল বলেন,
“পাকিস্তানকে একাত্তরের গণহত্যা ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যাকাণ্ডের অপরাধে দ্রুত ক্ষমা চেয়ে জড়িত সেনাদের বিচার করতে হবে। অন্যথায় গণহত্যার অপরাধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবো। সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী অপশক্তি বিএনপি-জামাতের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পাকিস্তান ও চীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দিয়েছে কিন্তু ট্রেনিং জমা দেয়নি। প্রয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা আবার যুদ্ধ করে স্বাধীনতা বিরোধীদের সকল ষড়যন্ত্র চিরতরে রুখে দিবে।”

সংগঠনে সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “আজ ১৪ ডিসেম্বর: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙ্গালি জাতির জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্টদায়ক দিন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে আজকের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিলো জাতির শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানদের। প্রতিথযশা লেখক, কবি, সাহিত্যক, চিকিৎসক, শিক্ষক, বিজ্ঞানীদের কে রাতের আঁধারে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচারের দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন,”পাকিস্তানি জান্তারা যখন বুঝতে পেরেছিল যে, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হতে যাচ্ছে ঠিক তখনই জাতিকে মেধা শূন্য করার জন্য এদেশীয় রাজাকার-আলবদর-আল শামসদের সহযোগিতায় হত্যা করেছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যা দিয়ে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত ত্রিশ লক্ষ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাকিস্তানী বাহিনী। এদের দ্বারা দুই লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিল। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করি বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানী দোসররা আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। লাল-সবুজের পতাকা আবারও খামচে ধরতে চায় পুরনো শকুনেরা। বিজয়ের মাসে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তিদের আবারও পরাজিত করতে হবে। পাকিস্তানী দোসররা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে একাত্তরের গণহত্যার দায় স্বীকার করে গণহত্যা ও গণধর্ষণে জড়িত পাকিস্তান সেনাদের বিচার করেনি। একাত্তরে পরাজিত হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য পাকিস্তান এখনো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। একাত্তরের গণহত্যা, শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ইত্যাদি একই সূত্রে গাঁথা। পাকিস্তানকে অবশ্যই এসব নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জড়িত পাকিস্তান সেনাদের বিচার করতে হবে। পাকিস্তান তাদের কুলাঙ্গার সেনাদের বিচার না করলে বাংলাদেশ সরকারকে অবশ্যই পাকিস্তানের সাথে সকল ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হব। জাতিসংঘের নিকট আহবান, একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যা ও গণধর্ষণে জড়িত পাকিস্তান সেনাদেরকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচার করতে হবে। বিশ্বে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতিসংঘকে অবশ্যই একাত্তরের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়ে দায়ী পাকিস্তান সেনাদের বিচার করতে হবে। এব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় সমগ্র দেশে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে। জাতিসংঘসহ সকল আন্তর্জাতিক ফোরামে এটি উপস্থাপনের জন্য খুব শীঘ্রই বিশ্বব্যাপী জনমত গঠনে কাজ শুরু করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।”

(এমএম)