মতামত ডেস্ক: হিংসা পতনের মূলকারণ হলেও গোটা বিশ্ব এটাকে এখন আপন নজরেই দেখছেন। এক দেশ বনাম আরেক দেশ। ভাই বনাম ভাইয়ের আগুনে পুড়ছে। বন্ধুর বিশ্বাস ঘাতকতায় বন্ধু পতিত। মানুষের এ যেন এক অসুস্থের প্রতিযোগীতা। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও বাস্তবতায় এখন পশুর চেয়েও কাজকর্ম-আচার, আচারণ নিকৃষ্ট । বাস্তবে দেখতে ঠিক মানুষের মতো হলেও ভেতরের রুপটা অমানুষ।
যেমন, ইউক্রেন-রাশিয়া। এটি গোটা বিশ্বকে আজ অসহায় করেছে। কিন্তু এটার পেছনে বড় স্বার্থ লুকিয়ে আছে। এ যুদ্ধ একটি দেশ আরেকটি দেশ দখলের স্বার্থ। তবে আমরা নিজের মাতৃভূমিতে বসবাস করে কোন দেশ দখল করতে মরিয়া দিনরাত ২৪ ঘন্টা? এ প্রশ্নই যেন এক অদ্ভুত মনে হবে সবার কাছে। বিশ্ব মোড়ল তারাও একই পথের পথিক। যুদ্ধ নয় শান্তি হোক পুরো বিশ্বে।
বই পাঠ্য পুস্ততকে লেখা কিভাবে মানুষ বড় হবে। সেই লেখার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। দেশের স্বনামধন্য ভার্সিটি থেকে পাশ করা লোকটিও আজ হিংসা মগ্নে লিপ্ত! যেসব মানুষ দ্বারা একটি স্বপ্নময় সমাজ সাঁজবে। যাদের চিন্তা শক্তিতে একটি সুস্থ সুন্দর রাষ্ট্র গঠন হবে। কিন্তু তাঁর বিপরীত হচ্ছে। অনেকই বলে থাকে যে, মূর্খ লোকে সমাজ নষ্ট করে। আসলেই এটা ভূল তথ্য জানা ছিলো। কারণ একজন অশিক্ষিত-মূর্খ মানুষ সমাজে কারো ক্ষতি করতে গিয়ে শতভাগ চিন্তা করবেন। তারা যদিও করে তবে ভূলবশত সামন্য করে। কিন্তু এই সমাজে এখন চিত্র ভিন্ন। গোটা উচ্চ শিক্ষিত ১০০ ভাগ জাতির মধ্যে ৯০ শতাংশই এখন হিংসুক, প্রতিহিংসায় লিপ্ত! একচুল পরিমাণ স্বার্থের জন্য তারা সবকিছু শেষ করতে পারে।
এসব শিক্ষিতরা মানুষকে তাদের অর্জিত ডিগ্রি দিয়ে আঘাত করেন এবং অশ্লিল ভাষাকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। একসময়ে হিংসা প্রতিহিংসার সংস্কৃতি ছিলো সমাজে। যত শিক্ষিত বাড়ছে সমাজে ততই যেন হিংসা প্রতিহিংসা বেড়েই চলছে। মানুষ কেন যেন দিন দিন অমানুষে রুপান্তরিত হচ্ছে। যে মানুষের মানুষত্ব নিয়ে বেঁচে থাকার কথা থাকলেও সেসব এখন পরসম্পদ দখলে মগ্ন। ভাই ভাইকে শেষ করে দিচ্ছে। বন্ধু বন্ধুকে শেষ করে দিচ্ছে। এই হিংসা-প্রতিহিংসা আমাদের জীবনকে এখন হাট-বাজারে পরিনত করছে।
নিজ সংসার ও ঘর থেকে শুরু করে গ্রাম-শহর, রাজনৈতিক মাঠ, অফিস-আদালত এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হিংসা-প্রতিহিংসা। তবে সমাজে এখন প্রকৃত মানুষ কারা? প্রশ্নটা জটিল করেছে নিশ্চয়ই তাই না? একসময়ে সমাজে কিছু মানুষ ছিলো, যাদেরকে যা বঝাতেন তাই বুঝতো। সেসব মানুষ কেউ মারা গেছেন আর কেউ বৃদ্ধ হয়ে আজও বেঁচে আছেন। এই মানুষের মধ্যে থেকেই কিছু চালাক-চতুর লোভী লোক ছিলো। তারা দেখতে মানুসৈর মতো হলেও ভেতরের রুপটা ছিলো অমানুষের। সেই মানুষ নামে অমানুষের বীজ থেকেই বেশিরভাগ অমানুষ-স্বার্থপরের বিস্তার ঘটে। এ কারণেই প্রকৃত মানুষগুলোর সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়াতে অমানুষের সংখ্যা বেড়ে চলছে। এ সমাজে আদর্শ নীতিবান মানুষের খুবই অভাব এবং প্রয়োজন। আবার অমানুষের সন্তান প্রকৃত মানুষও হয়। কথায় আছে-গোবরের মধ্যে পদ্মফুল ফুটে।
এখন মানুষ খুব জ্ঞানী, বৃদ্ধিমান তবে এসব জ্ঞান বৃদ্ধি কোথায় ব্যবহার করছে বেহুশ মানুষগুলোর জানা নেই। হয়তো তারা নিজেকে বৃদ্ধিমান জ্ঞানী মনে করলেও আসলেই তারা প্রকৃত বুদ্ধিমান নয়। এসব লোক শুধু চিন্তা করেন কখন মানুষের ক্ষতি করা যায়। আর একজন প্রকৃত শিক্ষিত, জ্ঞানী মানুষের চিন্তা চেতনাই যেন নিজেকে মুগ্ধ করার পাশাপাশি সমাজকেও মুগ্ধ করে। প্রকৃত জ্ঞানী বৃদ্ধিমান হচ্ছে ওই মানুষগুলো,যারা সর্বদা নিজেকে পরিশ্রম করে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আসল মানুষ কখনোই মানুষের ক্ষতি করে না, হিংসা অহংকার তাদের মধ্যে নেই। তারা সকল মানুষকেই মানুষ হিসেবে দেখেন।
তবে কেউ যদি মনে করেন যে, ভাল মানুষের শত্রু বেশি, এটা চিন্তা করা ভূল। খারাপ মানুষের স্থান অস্থায়ী-ভাঙা ঘরের মতো, যা একটি ঝড় আসলেই চুরমার হয়ে যাবে। কিন্তু ভাল মানুষ স্থান অধিকতর সময়ের শক্তি, স্থায়ী এবং মজবুত। বেশিরভাগ মানুষ তো বেহুশ, হুদাই দুইদিনের জন্য বাহাদুরি করে। মানুষ একসময়ে প্রতিযোগীতা করতো মানুষ হওয়ার জন্য, নিজের স্বপ্নপূরণ করার জন্য, এগিয়ে যাওয়ার চলার জন্য। আর এখন মানুষ চিন্তা করে হেঁটে নয়, দেওয়াল টপকিয়ে চলতে। এসব স্বভাব চরিত্রে মানুষ পরিনত হওয়ার কারণেই বেশিদূর যেতে পারে না পথিমধ্যে ক্লান্ত হয়ে যায়।
ধর্ম, বিজ্ঞান, গবেষণা, বই পুস্তক সবখানেই লেখা আছে কারো ক্ষতি অথবা কাউকে ধ্বংস করে বেশিদূর যাত্রা হয় না। হয়তো কোন না, কোন কারণেই তোমার ধ্বংস কিংবা বড় বিপদে শেষ হয়ে যেতে পারো। তুমি যদি এগিয়ে যেতে চাও তাহলে যোগ্যতা, মেধা-বুদ্ধি,পরিশ্রম করো। তোমার কৃতকর্মেই তোমার ধ্বংস অনিবার্য। প্রকৃত মানুষ প্রতিটা কদমে চিন্তা করেই পথ চলেন। পৃথিবীতে বহু প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর, সম্পদশালী মানুষ ছিলেন তাদের আজ অস্তিত্বও নেই। এই বিলীনের পেছনে একটাই কারণ ছিলো তারা প্রকৃত মানুষের মতো মানুষ হতে পারেনি। এদের চিন্তাশক্তি ছিলো অন্যের ক্ষতি করে নিজেকে জাহাজে পরিনত করা। সেই জাহাজ ডুবে গেছে, এখন জাহাজের চিহ্নও মানুষ স্বরণ করে না।
আত্মসম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো সমাজের চির অমর, চিরজাগ্রত। হাজার হাজার বছর প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাদেরকে স্বরণ করে। এই পাতায় লেখা নাম অর্জন খুব সহজেই হয়নি। এর পেছনে রয়েছে সততা, মেধা, পরিশ্রম, দক্ষতা এবং নিজেকে চেনা ও জানা। একজন পরিশ্রমী মানুষকে সহজেই ধ্বংস করা সম্ভব নয়। কারণ তাঁর অর্জিত পবিত্র সম্পদটুকুই সু-মহান, সু-সম্মানের স্থানে নিবে। তাই ওপর ভর করে নয়, ক্ষতি করে নয়, ধ্বংস করে নয়, জোর করে নয়, হিংসা অহংকার-প্রতিহিংসা, প্রতিঘাত নয় সুস্থ মস্তিস্কে সুস্থ সুন্দর জীবন দিয়ে পরিশ্রম করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি। একটি সুস্থ রাষ্ট্র তৈরী করতে অসুস্থ অসৎ উদ্দেশ্য দিয়ে কখনোই সম্ভব হবে না। আগামির প্রজন্মকে সুস্থ সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে অমানুষ-পশুর মতো চিন্তাশক্তি থেকে জাতিকে নিশ্চয়ই বেড়িয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক পরিবারের প্রজন্ম আছে। অভিশপ্ত সমাজ গড়ে তুললে নিজ সন্তানই সেই সমাজে বসবাস করবে।
আমাদের শিক্ষা-জ্ঞানকে অবশ্যই সঠিক স্থানে ব্যবহার করতে হবে। আগামি পৃথিবী যেন মসৃণ দীপ্তময় হয়ে উঠে ওই প্রজন্মের জন্য। একটি কলুষিত, দূষিত সমাজ রেখে যাওয়া মানেই প্রজন্মের পর অন্ধকার মেঘাচ্ছন্ন জীবনে নিক্ষিপ্ত হবে। কোন জ্ঞানী ভাবতেও পারেন সন্তান দুরে কোথাও পড়া-লেখা করে সে এই অন্ধকার সমাজে আসবে না এসব চিন্তা করা জ্ঞানী মানুষের ভূল। কারণ যেখানেই পড়া-লেখা করুক না কেন, এই দেশ মাটি তাঁর মাতৃভূমি। একদিন এই তীরে আসবে, তখন ঘৃণা করবে আর তখন বললে পিতা-মাতা আমাদের জন্য একটি অভিশপ্ত নোংরা সমাজ রেখে গেছেন। প্রজন্ম ভাববে এটা সমাজ না যেন, হিংসায় ভরা পশুরহাট। The hope is that people will return to their true human identity.
লেখক:
আল-আমিন এম তাওহীদ
গণমাধ্যমকর্মী।
Leave a Reply