মতামত ডেস্ক: আমরা কমবেশি রাজনীতির মূল সংজ্ঞা জানা আছে , রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি বা রাজগতি বা রাজবুদ্ধি হলো হল দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্ষমতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সমষ্টি। সামাজিক বিজ্ঞানে রাজনৈতিক মতাদর্শ হল একটি নির্দিষ্ট নৈতিক আদর্শ, নীতি, মতবাদ ও পুরাকথার সমষ্টি। এটি বৃহৎ গোষ্টী বা শ্রেণীর প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক আন্দোলনের প্রতীক বহন করে। একটি সমাজের গতিবিধি নির্ধারণ ও সামাজিক শৃঙ্খলা প্রদানের জন্য রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিলিপি অর্পণ করে।
এই রাজনীতির সংজ্ঞা বা আদর্শের সাথে দেশের কোন রাজনৈতিক দলের চিত্র ফুটে উঠেছে এমন কেউ বলতে পারবেন?রাজনীতি হলো আদর্শ ও নৈতিক নীতি এবং যেকোন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়াকে বলে। নীতি দিয়ে প্রতিষ্ঠান অথবা রাষ্ট্র পরিচালনা করতেও পারেন। তবে এসব নীতি বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেই সবকিছুই বিকল্প চিত্র দেখা যাচ্ছে।
বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক দল-সংগঠন রয়েছে। এটি পৃথিবীর কোন দেশেই এতোটা দল প্রতিষ্ঠান নেই। আর বিশ্বের ইতিহাসে এই দেশে রাজনৈতিক দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যক্তিগত আক্রমন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই বাঙালি জাতি আজ রাজনৈতিক শব্দটা ব্যবহার করছে।
রাজনীতির নামে ব্যক্তি স্বার্থ, লোভ-লালসা, হত্যা,গুম,খুন, চাঁদাবাজি, হয়রানি, মামলা, হামলা কাউকে হটিয়ে অথবা হত্যা করে ক্ষমতার যাওয়ার স্বপ্ন, রাস্তাঘাট বন্ধ করে সংগ্রাম, লাশের এ্যাম্বুলেন্স ও অসুস্থ রোগীর গাড়ির বন্ধ করে দিয়ে মিছিল নিয়ে সমাবেশ করা, রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন-মানববন্ধন করছে,যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সড়কের মধ্যে মঞ্চ তৈরী করে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এ যেন নিত্যদিনের চিত্র। কে শুনছে কার কথা? কে দেখছে কার ব্যথা? সবাইতো এক পথের যাত্রী! কোথায় আদর্শ রাজনীতি আর নেতা?
সুস্থধারার রাজনীতি নাই বলতেই চলে। রাজনীতির নাম শুনলেই মানুষ এখন অভিশাপ মনে করছেন। যে রাজনীতি মানুষের দুঃখ কষ্ট বুঝবে না নিশ্চয়ই সেই রাজনীতি দেশ ও জাতির কাছে বোঝা এবং অভিশাপ মনে হচ্ছে সমাজের কাছে। তেমনি আমরা এখন রাজনীতি আর নেতাদের সমাজের বোঝা মনে করি। কারণ তারা ব্যক্তি স্বার্থ আর ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে নিজেকেও শেষ করে দিতে পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বাধীনতার পরে এইদেশে নোংরা রাজনীতির পথচলা শুরু হয়। সেই থেকে আজও চলমান আছে। কোন দলই সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। যে দল যেমন পারছে সাধারণ মানুষকে ভূলবাল বুঝিয়ে তেমনি তারা চলছে। এসব রাজনৈতিক দলগুলো কখনোই জাতিকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা নেই। শুধু স্বপ্ন ক্ষমতার চেয়ারে বসা। যদি দেশের রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের জন্য কিছু করতেন তাহলে এইদেশে অপরাধ, দুর্নীতি নামে কোন শব্দ থাকতো না।
প্রতিনিয়ত রাজনীতির নামে বেহায়াপনা চলছে। কে শুনবে কার কথা, কারণ এদেশের সবাই নেতা!
ব্যক্তি স্বার্থের জন্য এসব রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অমানুষ বানাতেও একটু লজ্জা পায় না। রাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, জ্বালাও পোড়াও, যানবাহন ভাংচুর, হত্যা,খুন,গুম অগ্নিকান্ড, ধর্মকে ব্যবহার। আসলেই কি এসব রাজনীতির চরিত্র? এটা কি রাজনীতির মূলনীতি আদর্শ?
কোনো দল সংগঠনের সভা সমাবেশ করতে চাইলে তাদের নিজ অফিস অথবা জমি ক্রয় করে মাঠে করুন। জনগনের সম্পদ ও সম্পত্তি কারো বাপ-দাদার নয়। মনে চাইলেই সড়কের ওপর সমাবেশ আন্দোলন ও মিছিল করছেন এটা আপনাদের সকল রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি? প্লিজ এসব বন্ধ করুন। মানুষের কর্মঘন্টার ক্ষতি হচ্ছে। আপনাদের রাজনীতির নোংরামির কারণে দেশ ও মানুষের বিশাল ক্ষতি হচ্ছে। জাতি এখন সুন্দর পরিবেশে বাচঁতে চায়।
আজ ১১ জানুয়ারি-২০২৩ সাল, রাজনীতি শহরে দুটি দলের সমাবেশ ছিলো। এ কারনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। কোন দল সড়ক বন্ধ করে সমাবেশ আন্দোলন করছে, কোন দলের মিছিল যাচ্ছে যানবাহন বন্ধ রেখে। এ যেন মানুষের জীবন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তামশা শুরু করেছে। এদেশের মানুষের ভোর হলেও কর্মজীবন শুরু হয়। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে হয়। এই শহর বড় বিশাল নয়। ঘনবসতি শহরে ২৪ ঘন্টা যানজট লেগেই থাকে। আবার এই যানজটের মধ্যে হয় যদি লাজনৈতিক সমাবেশ তাহলে তো পুরো শহরই অচল। রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের চলাচলের ব্যবস্থা বন্ধ করে সমাবেশ করা কেমন রাজনৈতিক দল বলে? আসলেই কি এরা রাজনীতির দল নাকি রাজনীতির নামে মানুষের সাথে প্রতারণা করা?
আদর্শ রাজনীতি দল ও নেতা কখনোই মানুষকে কষ্ট বা আঘাত দিয়ে রাজনীতি করবে না। এছাড়াও রানৈতিক নীতিমালায় জনগনের জিনিসপত্র ক্ষতি করে রাজনৈতিক শিষ্টচার বলে না। তবে এদেশের মাটিতে এসব হচ্ছে কেন? তারা রাজনীতির নামে এই বেহায়াপনা কেনই-বা করছেন? প্রবাদে আছে ‘রেখেছে বাঙালি করে মানুষ করোনি’ সত্যি আজ আমরা প্রকৃত মানুষ আর প্রকৃত রাজনীতিবিদ হতে পারেনি। শরীরে রাজনীতিবি শব্দ থাকলেও অন্তরটা কুনীতিতে ভরা। একজন রাজনীতিবিদও এইদেশের মানুষের কথা চিনতে করে না বলেই আজ সড়ক অবরোধ সংগ্রাম আন্দোলন করছে ক্ষমতা পাওয়ার লোভে। হয়তো রাজনৈতিক দলগুলো জানে না যে, এসব করার কারণে দিনের পর দিন মানুষের মন থেকে রাজনীতি শব্দটা মুছে যাচ্ছে। মানুষ রাজনীতিকে এখন চরম ঘৃণা করছে। কারণ যে রাজনীতি জাতি ও সমাজকে নষ্ট করছে সেই রাজনীতিকে ঘৃণা করা স্বাভাবিক। কারণ মানুষ এখন জ্ঞানী। কেউ কাউকে ঠকাতে গেলে প্রতিবাদ করছে। রাজনৈতিক দল ও নেতাদের মিথ্যাবানী শুনতে শুনতে মানুষ বিরক্ত হয়ে গেছে। এসব মানুষ বিশ্বাস করে না। রাজনীতি এখন ধোকানীতি এটা সবাই বুঝতে পেরেছে বলেই মানুষ বহুদুরে রাজনীতি থেকে। নোংরা রাজনীতিকে এখন জাতি লালকার্ড দেখিয়ে নিজের চিন্তা আর এগিয়ে চলার স্বপ্ন দেখছেন।
একসময়ে রাজা’রা রাজনীতি করতে করতে ফকির হয়ে যেতো। তাদের আদর্শ ছিলো মানুষের জন্য নিজের সম্পদ দিয়ে কিছু করা। আর এখন টোকাই-ফকির, ভিক্ষুক, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, মাফিয়া, পতিতাপাড়া হচ্ছে কোটিপতি আর বড় রাজনৈতিক নেতা! যখন সুস্থ রাজনীতির মধ্যে অসুস্থ অভিশপ্ত মানুষ প্রবেশ করে তখন মনে করবেন এটায় আর ভাল মানুষের স্থান হবে না। আদর্শ রাজনীতি আর নেতা এ সমাজে নেই। সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা বেদনা বুঝার মতো সেই নীতিবান নেতাও নেই। আদর্শ রাজনীতি ও দল সবসময় মানুষের জন্য কিছু আগে করেন তারপর ক্ষমতার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু আমাদের সমাজে ভিন্ন চিত্র। সারারাত চিন্তা করে নেতারা কালকে সকালে ওই দল-সেই দলকে কি বলে মোকাবিলা করা যাবে। এই হচ্ছে দেশের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের স্বভাব চরিত্র। এটা কোন মানুষের আদর্শ চরিত্র হতে পারে না। যেসব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দীর্ঘদিন যাবত দেশ ও জাতির সেবায় কাজ করবে, মানুষের দুঃখ কষ্ট বুঝবেন এবং বিপদে-আপদে পাশে থেকে সেবার করার নামই হচ্ছে প্রকৃত রাজনীতি ও নেতা। এছাড়া মাইক ও মিডিয়ার সামনে বকবক করা দল ও সংগঠনগুলো ধোকাবাজ, বাটপার, এরা দেশ ও জাতির চির শত্রু।
যেসব রাজনৈতিক দলগুলো মানুষকে কষ্ট দিয়ে কাজকর্ম করে না। সংগঠন নীতি আদর্শ এবং একমাত্র জাতির সেবায় কাজ করেন তারাই হলো প্রকৃত দল ও সংগঠন এবং রাজনীতিবিদ। নীতি আদর্শকে যেসব দল ও সংগঠন বিক্রি করে না তারাই প্রকৃত। যেসব দলের কাছে বিবেক ও দেশপ্রেম এবং মানুষেল জন্য কিছু করে যাওয়া তারাই হলো দেশ্রেপ্রেমিক সংগঠন।
যেমন কথায় আছে, ‘সময় ফুরিয়ে গেলে শত সাধন করলেও লাভ হবে না’ তাই সকলের উচিত রাজনীতি বাদ দিয়ে নিজের চরকায় তেল দেওয়া। পরিবার ও কর্মময় জীবন নিয়ে ডুবে থাকুন ভবিষ্যৎ ভাল হবে। আপনার আমার মাথার ওপর লবন রেখে বরই খায় এইদেশে রাজনৈতিক দলগুলো ও নেতারা। যে দল দেখুন না কেন, এরা সবাই এককাতারের লোক। তারা মানুষের জীবন নিয়ে রং তামাশা করে। ক্ষমতায় গিয়ে রাজনৈতিক নেতারা তাদের বাড়ি-গাড়ি, বউ-সন্তান পরিবার ভাল থাকে, তাদের সন্তানকে বিদেশে পড়া লেখা করায়। আর ওই যাদের স্লোগানে ক্ষমতায় বসছে সেই গরিবের সন্তানরা দেশের ভাঙাচুড়া প্রতিষ্ঠানে পড়া লেখা করে, নেই গাড়ি-বাড়িও পারে না ঠিকমতো একবেলা খেতে। এসব চিত্র এই দেশে চিরচেনা। বাঙালি বুদ্ধিমান হলেও আসল জায়গায় এরা নির্বোধ হয়ে যায়।
রাজনৈতিক দল ও নেতারা কথায় কেউ যদি রাষ্ট্র সমাজের ক্ষতি করে এটার দায় শুধু দল ও সংগঠনের নয় যিনি করবেন তার সবচেয়। তবে কোন দল কার স্বার্থে মানুষের ক্ষতি করা হচ্ছে? এটা প্রতিটা মানুষকে ভাবতে হবে। হুটহাট করে লাফিয়ে লাফিয়ে সড়ক বন্ধ করা, স্লোগান দেওয়া এসব নোংরামি এটা রাজনীতির মুল আদর্শ বলে না। নেতার কথায় অথবা দলের কথায় আপনি সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিবেন এবং আঘাত করেবন তার ভবিষ্যৎ পরিমাণ খুবই ভয়াবহ হবে। লোভী ও স্বার্থবাজ রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কথায় দেশ ও সমাজের ওপর আঘাত করবেন না। আপনি একজন প্রকৃত মানুষ হলে নিশ্চয়ই নিজের দিকে লক্ষ্য রাখুন, নিজের পায়ে দাড়িঁয়ে সুন্দর জীবন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখুন।
এইদেশ সবার, কারো ব্যক্তিগত অথবা বাপ দাদার সম্পত্তি নয়। একজন আদর্শ মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার বহৃৎ সম্মানের। সবাই কিন্তু মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাচঁতে পারে না। প্রকৃত আসল মানুষ হওয়াটাই হচ্ছে জীবনের বড় সফলতা। নোংরা মস্তিস্কের রাজনীতি ছেড়ে দেশ ও মাতৃকার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখুন। দেশবিদ্রোহী দেশবিরোধী সমাজবিরোধী রাজনীতি দল ও নেতারা জাতির অভিশাপ দেশের ক্ষতিকারক। যে রাজনীতি সমাজ ও জাতি, অর্থনীতি,দেশকে বিশ্বের বুকে উঁচু করতে পারে সেটাই হবে দেশের মঙ্গলজনক এবং কল্যাণকর।
( লেখক: আল-আমিন এম তাওহীদ, গণমাধ্যমকর্মী)
(এমএম)
Leave a Reply