লিখেছেন তানবির হাসান চাঁদ:আম্মুরে আর তেমন মনে টনে পড়ে না। শুধু হুট করে বাড়ি ফিরলে নিজের অজান্তে ‘আম্মু বলে ডাইকা উঠি’।
আম্মুরে আসলেই আর মনে পড়েনা। শুধু ওয়্যারড্রোবে কাপড় খুজতে গেলে আর কিছুই খুজে পাইনা। ‘আম্মু আমার শার্ট কই’ বলতে যেয়ে শুধু থমকে যাই।
এই যে আমি বাসায় ফিরলাম। ছোট্ট একটা ব্যাগ নিয়ে আসছি এবার ম্যাস থেকে। প্রতিবার দুই,তিনটা ব্যাগ বোঝাই করে ময়লা কাপড় আনি। আম্মু বলে আমার কাপড় ধোয়ায় নাকি ময়লা যায় না। সবগুলা শার্ট যত্ন নিয়ে ধুয়ে ইস্ত্রি করে দিতো আম্মু। আর এখন কাপড় আমি ধুই, ময়লা যায় কিনা তা জানিনা, কিন্তু কষ্টগুলা আর যায়না।
মাঝে মাঝে বন্ধুবান্ধবদের ফোন আসে। হ্যালো আম্মু বলো শুনলেই আমার ফোনের দিকে তাকাই। উহু ফোন আসেনা আম্মার নাম্বার থেকে। আসবে কেমন করে? নেটওয়ার্ক এর বাইরে চলে গেলে কি আর ফোন আসে?
এখন দুঃখগুলোও ভোতা হয়ে গেছে। বাইরে যখন বৃষ্টি পড়ে, আমি ম্যাসের ডাইনিং এ বসে তখন ভাতের দিকে তাকায় থাকি আর আম্মুর হাতের খিচুড়ি খাওয়ার জন্য তখন ভেতরটা হাহাকার করে,আম্মু খুব ভালো খিচুড়ি রান্না করতে। খিচুড়ির কথা মনে পড়ে, কই আম্মুকে তো আর মনে পড়েনা?
আমি মনপুরা থেকে ফেরার পথে প্রতিবার আম্মুর কথা মনে পরে আম্মুর জন্য চোখ ভিজে যেতো আমার৷ হুহু করতো বুকটা। বুঝতে পারতাম না যে শহর ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট বেশি হচ্ছে নাকি আম্মুকে ছেড়ে যাওয়ার।
এখন বুঝি বেশ ভালো করেই বুঝি যেই শহরে মা নেই, সেই শহর শুধুই শহর। ‘আমার শহর’ না।
আসলেই আর আম্মুরে মনে পড়ে না। যেই মানুষটা পুরো অস্তিত্ব জুড়ে, সেই মানুষটাকে আবার আলাদা করে কিভাবে মনে পড়বে? আগে আম্মুরে ধরতে পারতাম, ছুইতে পারতাম কপালে আদর দিতে পারতাম। এখন আম্মু থাকে প্রতিটা হাহাকারে, প্রতিটা কান্নায়, প্রতিটা যন্ত্রণায়, প্রতিটা অসুখে!!
যখন খুব খারাপ লাগে,প্রচন্ড কষ্টে যখন ঘুম আসেনা,কাঁদতে কাঁদতে যখন চোখ জ্বালা শুরু করে তখন আম্মুর ছবিটা দেখি আর নিজেরে বুঝ দেই।
“আম্মু ঘুমাচ্ছে চাঁদ তুইও ঘুমায় যা ঘুমায় যা!
২ বছর ৮ মাস হয়ে গেছে আম্মু আমাদের মাঝ থেকে চলে গিয়েছে। উপারে ভালো থেকে প্রিয় আম্মু।
Leave a Reply